মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন
সু-প্রভাত বাংলাদেশ : ভয়ঙ্কর নারী কিলারের নাম রুমা, বয়স ২৮ বছর, মাত্র ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা। অনিন্দ্য সুন্দরী, ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি । দেখে বুঝার কোন উপায় নেই তিনি একজন ভয়ঙ্কর কিলার। শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে দুধের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহকে চাপাতি ও হেস্কো ব্লেড দিয়ে ১১ টুকরা করেছেন ভয়ঙ্কর নারী কিলার রুম নিজেই। ১১ টুকরো করার পর ৭ টুকরো দুটি পলিথিনে মুড়িয়ে
রূপগঞ্জের পূর্বাচলের একটি লেকে ফেলেছেন। বাকি চার টুকরো ফেলেছেন ৩০০ ফিট এলাকার একটি কাশবনে । শিল্পপতি মাসুমকে হত্যার পর ১১ টুকরা করেও ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি রয়েছে ভয়ঙ্কর এ নারী কিলার রুমার। শিল্পপতি মাসুমকে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনায় পরকীয়া প্রেমিকা রুমা ও তার বান্ধবী রুকু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেছেন গতকাল শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হায়দার আলী। জবানবন্দিতে রুমা নির্মম খুনের ভয়ঙ্কর বিবরন দেয়। শিল্পপতি মাসুমকে হত্যার পর রাজধানীর কাফরুলের বাসায় ছিলেন রুমা। কোন ধরনের টেনশন ছাড়াই চলাফেরা ও ঘুমাতে থাকেন রুমা। নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একটি দল বুধবার রাতে তাকে ঘুম থেকে তুলে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঘটনার সবকিছুই অকপটে স্বীকার করেন রুমা। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আনার পর তার মুখে রয়েছে ঠোঁটের কোন এক চিলতে হাসি। কোন অনুশোচনা নেই রুমার। দামি শার্ট-প্যান্ট, মাথায় ক্যাপ ও বুট জুতো পরা রুমা আক্তার বেশ হাসিখুশি ছিলেন। টেনশনবিহীন হাস্যোজ্জ্বল এই নারী চুইংগাম চিবুচ্ছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা তার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে রুমা আক্তার হাসিমুখে হাত নেড়ে তাদের সায় দিচ্ছিলেন। হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি রুমার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইয়ুম খান । তিনি বলেন, আদালতে রুমা জানিয়েছে ১১ টুকরা করে শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে হত্যা ও লাশ ফেলে দিতে রুমাকে সহায়তা করে তারই বান্ধবী মডেল রুকু । জবানবন্দিতে রুমা দাবী করেন , কাফরুলের তিনটি কক্ষের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে তার ছোট বোন, বান্ধবী, ভাবী ও তার বাচ্চা বসবাস করেন। এই বাসায় আসার পর জসিম উদ্দিন মাসুমকে দুধের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে অজ্ঞান করা হয়। অচেতন অবস্থায় দুই দিন থাকার পর মঙ্গলবার একটি কক্ষের বাথরুমে নিয়ে হত্যার পর লাশ ১১ টুকরা করা হয় জসিম উদ্দিন মাসুমকে।রুমার এক বন্ধুকে দিয়ে দুটি ব্যাগ নিয়ে আসার পর দুটি ব্যাগের ভিতরে সাত টুকরা রূপগঞ্জের একটি লেকের পাড়ে এবং অন্য চারটি অংশ ৩০০ ফিট এলাকায় একটি কাশবনে ফেলে দেয় রুমা। এরপর রুমার ভাষ্য মতে বৃহস্পতিবার রুমার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাশবন থেকে জসিম উদ্দিন মাসুমের দেহাংশের আরো চারটি টুকরা উদ্ধার করে পুলিশ। হাত, পা ও কোমর থেকে বুকের খণ্ডিত অংশ ছিল পরবর্তী উদ্ধার হওয়া দেহাংশের। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, ব্লেড বনানীর ২০ নম্বর সড়কের একটি বাসায় রেখে আসেন রুমা। পরে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে চাপাতি, ব্লেড ও মাসুমের কিছু কাপড় চোপড় জব্দ করা হয়েছে। যার কিছুই তাদের এই ফ্ল্যাটের অন্যরা এমন ল্মোহর্ষক বিষয়টি জানতেই পারে নাই। আদালত সূত্র থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের লেক থেকে ১৩ নভেম্বর তিনটি পলিথিনে মোড়ানো মাসুমের সাত (৭) টুকরা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আলোচিত এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয় আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। নির্মম এমন হত্যাকান্ডের মামলায় তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হত্যার পর কাফরুলের বাসায় ছিলেন রুমা। কোন ধরনের টেনশন ছাড়াই চলাফেরা ও ঘুমাতে থাকেন রুমা। বুধবার রাতে পুলিশ তাকে ঘুম থেকে তুলে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঘটনার সবকিছুই অকপটে স্বীকার করেন রুমা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রুমার ভাষ্য, শিল্পপতি মাসুমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল দীর্ঘদিনের, পাশাপাশি মাসুম অন্য আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। আরো এক নারীর সাথে এমন সম্পর্খ থাকায় জসিম উদ্দিন মাসুমের উপর রাগ-ক্ষোভ ও আবেগের বসে খুন করে রুমা।গত ১০ নভেম্বও বিকেলে শিল্পপতি মাসুম তার বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান গিয়ে ব্যক্তিগত চালককে বাসায় ফিরে যেতে বলেন এবং মালেক নামে আরেক গাড়ির চালককে ডেকে নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ আসবেন। মাসুমের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ ও কোন কোনো খোঁজ না পেয়ে সোমবার গুলশান থানায় জিডি করেন বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু। এরপর ১৩ নভেম্বর সকালে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কের লেকের পাড় থেকে তিনটি পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশের সাত টুকরা উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই জিডির সূত্র ধরে নিশ্চিত হওয়া যায় ওই লাশের টুকরা শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমের।শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম গাড়িচালক আবদুল মালেক জানান, ‘নদী জলে শাপলা ভাসে’সহ দুটি সিনেমার প্রযোজক এই মাসুম। সিনেমা জগতে মিশতে গিয়ে অনেক নায়ক-নায়িকার সঙ্গে তার পরিচয়। এর সূত্র ধরে রুমা আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তার বাসা কাফরুল। এর আগেও কয়েকবার ওই বাসায় গেছেন শিল্পপতি। তার সন্ধান পেতে ঘটনার পর রুমার বাসায় গেলে তিনি জানান, রোববার বিকেলে সেখানে যান মাসুম। আধা ঘণ্টা পর বাসা থেকে চলে যান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার রুমার সাথে ব্যাবসায়ি মাসুমের অবৈধ সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার । তিনি বলেন, শিল্পপতি জসীমউদ্দিন মাসুমের ক্ষত বিক্ষত সাত টুকরো লাশ রূপগঞ্জ লেক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ডিসিস্টের পরিচয় জানতে পারি। তার সাথে রুমা নামের একটি মহিলার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি হত্যা করে মরদেহটি টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন। হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড মূল হোতা নিহতের প্রেমিকা রুমা ও তার সহোযোগি রুকু।নিহতের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন, দাড়ি, নখ ও বাঁ পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার লাশ শনাক্ত করি। গত ১০ নভেম্বর বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছি। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. তরীকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার রুমা আক্তার ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার তারাকান্দা এলাকার নজর আলীর মেয়ে। তিনি মাত্র নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও কম্পিউটার কাজে বেশ দক্ষতা অর্জন করেছেন। রাজধানীর বনানী এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এই অবিবাহিতা নারী। গত ঈদুল ফিতরের সময় ঢাকায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শিল্পপতি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং অল্পদিনেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক শিল্পপতি জসিম উদ্দিন শ্যাওড়াপাড়ায় একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে সেখানে রুমা আক্তারকে রক্ষিতা হিসেবে রাখেন। জসিম উদ্দিন নিয়মিত সেই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন এবং রুমা আক্তারের সঙ্গে রাত্রিযাপন করতেন।